৯ জুলাই, ২০১৪

সমপরিসীমায় সর্বোচ্চ ক্ষেত্রফল পাব কীভাবে?

   

ধরুন, আপনাকে এক খণ্ড নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের দড়ি দিয়ে বলা হল, আপনি এটা দিয়ে যত বড় ক্ষেত্র রচনা করতে পারবেন, তার সবটুকু আপনার। তাহলে আপনি কী করবেন? মানে কোন জ্যামিতিক আকৃতির ক্ষেত্র রচনা করবেন? বর্গ, সামান্তরিক, বৃত্ত, আয়ত, ট্রাপিজিয়াম না পঞ্চভুজ? এটাই আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তূ। মনে হতে পারে, এক রকম নিলেই হল। না। কারণ, অনুপাত সব জ্যামিতিক চিত্রের জন্য সমান নয়, ভিন্ন।

আমাদের উত্তর হবে বৃত্ত।  চলুন প্রমাণ করা যাক।
যেহেতু আমাদের আলোচনা ক্ষেত্রফল নিয়ে, তাই আমরা আমাদের আলোচনা দ্বিমাত্রিক জগতে সীমিত রাখবো।
Assumption: বহুভুজ (Polygon) দু’ ধরণের হতে পারে- সমভুজী (Regular Polygon) ও বিষমভুজী। আর আমরা জানি, পরিসীমা (Perimeter) সমান থাকলে নির্দিষ্ট বাহু বিশিষ্ট বহুভূজসমূহের মধ্যে সমবাহু বহুভুজের ক্ষেত্রফল হয় সর্বোচ্চ। অর্থাৎ ত্রিভুজের ক্ষেত্রে সমবাহু ত্রিভুজ, চতুর্ভুজের ক্ষেত্রে বর্গ ইত্যাদির ক্ষেত্রফল হবে সর্বোচ্চ।
এ বক্তব্যের প্রমাণ বেশ জটিল। এটা আমরা অন্য সময় দেখবো। তবে এখানেও একটি আংশিক প্রমাণ দেখবো। এবারে মূল আলোচনায় আসি। ধরি, প্রদত্ত পরিসীমা = P এবং ক্ষেত্রফল = A। হিসাবের সুবিধার জন্য ধরি ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল A3, চতুর্ভুজ A4 ইত্যাদি।
প্রমাণের জন্যে আমরা ধারাবাহিকভাবে কম ভুজবিশিষ্ট চিত্র থেকে ক্রমান্বয়ে বড় ভুজ বিশিষ্ট ক্ষেত্রের দিকে যাবো। তাহলে, প্রথমেই আসবে একভুজী বাহুর কথা। এ থেকে আমরা কোন ক্ষেত্রফলই পাবো না। তাহলে A1= 0।
দ্বিভুজের ক্ষেত্রেও বাহুদ্বয় মিলিত হবে না বলে (শুধুই একটি কোণ তৈরি হবে) A2=0।

ত্রিভুজঃ আমাদের Assumption অনুযায়ী সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল সর্বোচ্চ হবে।
তাহলে, পরিসীমা = P
∴ প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য = P/3 (সমবাহু বলে)
আমরা জানি, সমবাহু ত্রিভুজের বাহুর দৈর্ঘ্য a হলে ক্ষেত্রফলA3= √3a2/4।
∴ এখানে, a= P/3। ∴A3= √3(P/3)2/4= √3P2/36=P2/20.78
বর্গঃ প্রতি বাহুর দৈর্ঘ্য,a = P/4
তাহলে, A4 = (P/4)2=P2/16 [যেহেতু বর্গের ক্ষেত্রফল = (এক বাহু)]
ফলে, A4>A3

আংশিক প্রমাণ- পরিসীমা সমান হলে সমভুজী বহুভুজের ক্ষেত্রফল সর্বোচ্চ।
আমরা জানি, আয়তক্ষেত্রের বিপরীত বাহুদ্বয় সমান ও সমান্তরাল।
এখন ধরি, বৃহত্তর বাহু = x,
তাহলে, বৃহত্তর দুই বাহু= x+x = 2x
তাহলে, ক্ষুদ্রতর বাহুদ্বয়ের যোগফল = P-2x
∴ প্রত্যেক ক্ষুদ্রতর বাহু = (P-2x)/2
∴ক্ষেত্রফল, A = x(P-2x)/2
= Px/2-x2
x এর সাপেক্ষে অন্তরীকরণ করে,
dA/dx = P/2- 2x
গুরুমানের জন্যে dA/dx =0
বা, P/2-2x = 0
বা, x = P/4
∴বৃহত্তর বাহু = P/4
এবং ক্ষুদ্রতর বাহু = (P-P/2)/2 = 1/2×P/2 = P/4
দেখা যাচ্ছে যে সর্বোচ্চ ক্ষেত্রফল পেতে হলে চতুর্ভুজের ক্ষেত্রে বৃহত্তর বাহু = ক্ষুদ্রতর বাহু হয়। ফলে ক্ষেত্রটি বর্গে পর্যবসিত হয়। ফলে, আমরা চতুর্ভুজের ক্ষেত্রে Assumption টি প্রমাণ করলাম। এর মাধ্যমে আমাদের রম্বস, সামান্তরিক, ট্রাপিজিয়ামসহ যেকোন চতুর্ভুজ নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন ফুরালো। এ পর্যন্ত আমরা দেখলাম ত্রিভুজের চেয়ে চতুর্ভুজ বেশি ক্ষেত্রফল তৈরি করে যদি পরিসীমা সমান হয়।

অন্যান্য বহুভুজঃ
যেকোন বহুভুজের (সমান বাহুবিশিষ্ট) ক্ষেত্রফল বের করার জন্য বেশ ক’টি সূত্র আছে। একটি সূত্র হল,
A = (¼)ns2cot(π/n); যেখানে , n = বহুভুজের বাহুর সংখ্যা, s = বাহুর দৈর্ঘ্য।
আরেকটি সূত্র হল A = Pa/2 যেখানে P= পরিসীমা এবং a= যেকোন বাহুর মধ্যবিন্দু থেকে বহুভুজের কেন্দ্রের লম্ব দূরত্ব।
তাহলে পঞ্চভুজের জন্যে, n = 5. আর s = p/5হওয়ায় প্রথম সূত্র মতে,
∴A5= (1/4) × 5 × (P/5)2×cot(π/5)
হিসেবকরেপাওয়াযায়, A5 = P2/14.52
A5>A4
অতএব, পঞ্চভুজের ক্ষেত্রফল চতুর্ভুজেরক্ষেত্রফলের চেয়ে বড়।
ষড়ভুজের জন্য n = 6, s = P/6
ফলে, A6= (1/4) × 6 × (P/6)2×cot(π/6)
= (P2/4×6) ×cot (pi/6)
=P2/13.8477
দেখা যায়, A6>A5
অতএব, ষড়ভুজের ক্ষেত্রফল পঞ্চভুজেরক্ষেত্রফলের চেয়ে বড়।
একইভাবে ক্রমান্বয়ে বৃহত্তর ভুজের জন্যে হিসাব করতে থাকলে আমরা পাব, সপ্তভুজের জন্য A7 = P2/13.4762
ফলে, A7>A6
অষ্টভুজের জন্যে, A8= P2/13.2473
ফলে, A8>A7
অতএব,আমরা দেখতে পাচ্ছি, ভুজের সংখ্যা যত বাড়াবো, ক্ষেত্রফলও তার সাথে ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে। কারণ, হিসাব অনুযায়ী ক্রমেই অপেক্ষাকৃত ছোট সংখ্যা দ্বারা ভাগ হচ্ছে।

বৃত্তঃ আপাত দৃষ্টিতে বৃত্তকে বহুভুজ মনে না হলেও আসলে বৃত্তকেও বহুভুজ বলা চলে যার ভুজের সংখ্যা অসীম।
আমাদের দ্বিতীয় সূত্র মতে,A = Pa/2
বৃত্তের জন্যে, a= r
আর এখানে, r = P/(2π) [কারণ, P= 2πr, [বৃত্তের পরিধি = পরিসীমা]
অতএব, A = Pa/2 = P×( P/(2π))/2 = P2/12.56 যা অষ্টভুজের ক্ষেত্রফলের চেয়ে বড় এবং অন্যান্য বহুভুজের ক্ষেত্রফলের চেয়েও বড় হবে।
A = πr2 সূত্র দিয়ে বের করলেও ফল একই আসবে।
যেমন, A = πr2 = π × (P/2π)2 = P2/(4π) = P2/12.56
অতএব, জয় হল বৃত্তের। অর্থাৎ সমান পরিসীমাবিশিষ্ট কোন ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল সর্বোচ্চ পেতে চাইলে জ্যামিতিক চিত্রটিকে হতে হবে বৃত্তাকার।


আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ

লেখকের পরিচয়

আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী। অনলাইনে লেখালেখির হাতেখড়ি হলেও বর্তমানে পাই জিরো টু ইনফিনিটি, ব্যাপন ও প্যাপাইরাসসহ বেশ কিছু ম্যাগাজিন ও পত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন। শখ ও ভবিষ্যত পেশাগত টার্গেট জ্যোতির্বিদ্যা ও কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি নিয়ে গবেষণা। বিশ্ব ডট কমের কন্ট্রিবিউটর, সম্পাদক ও প্রকাশক।