২ ডিসেম্বর, ২০১৪

শক্তিকে ভরে রূপান্তর সম্ভব কিনা?

   

আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুসারে ভর ও শক্তি একে অপরের রূপভেদ। অর্থ্যাৎ ভরকে শক্তিতে ও শক্তিকে ভরে রূপান্তর সম্ভব। ভরকে শক্তিকে রূপান্তরের ভয়াবহ পরিণতি দেখেছি আমার ২য় বিশ্বযুদ্ধে, যার ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করে জাপান। ভর থেকে শক্তি রূপান্তরের আরেকটি পরিচিত উদাহরণ হল সূর্য। প্রতিনয়ত এতে হাইড্রোজেন হিলিয়ামে রূপান্তরিত হয়ে বিপুল শক্তি তাপ ও আলো আকারে নির্গত করছে।
 আইনস্টাইনের ভর-শক্তি সমীকরণ থেকে দেখা যায় স্বল্প পরিমান বস্তু থেকে বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করা যায়। যেমন মাত্র ১ কেজি ভরের বস্তু থেকে ৯০০ কোটি কোটি জুল শক্তি পাওয়া যাবে।
জুলের হিসাব বোঝার জন্য বলা যায়, কোন বস্তুর উপর এক নিউটন বল প্রয়োগ করে এর এক মিটার পরিমাণ সরণ (অবস্থানের পরিবর্তন) ঘটাতে হলে যে পরিমাণ কাজ করতে হবে তাই এক জুল শক্তির সমান।  আরও সহজ করে বললে, এক সেকেন্ডে এক ওয়াট পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হলে বলা হবে এক জুল শক্তি ব্যয়িত হয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে, ভর থেকে যদি শক্তি পাওয়া যা, তাহলে শক্তি থেকে ভর পাওয়া যাবে না?
হ্যাঁ, পাওয়া যাবে। এরও কিছু বাস্তব উদাহরণ আছে।
কোন বস্তুর তাপমাত্রা বাড়ালে তাপীয় শক্তির প্রভাবে এর ভর বেড়ে যায়। যেমন  প্লাটিনাম-ইরিডিয়াম সঙ্কর ধাতুতে তৈরি কেজির মানদণ্ডের তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ালে ভের ভর এক পিকোগ্রাম (10−12 g) বেড়ে যায়। এছাড়াও ঘুর্ণনরত বলের ভর বেড়ে যায়, সঙ্কুচিত স্প্রিঙের ভর বেড়ে যায়। তবে এসবগুলো ক্ষেত্রেই পরিবর্তন হয় সামান্য। কারণ, সমীকরণ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, অল্প ভর থেকে বিপুল শক্তি পাওয়া যায়। তাহলে, অল্প ভর পেতেই ব্যয় করতে হবে বিপুল শক্তি, গণিতে অপক্ক হলেও এটা বোঝা সহজ!
ভর থেকে শক্তিতে রূপান্তরের আরেকটি উদাহরণ ঘটে কণা ত্বরকযন্ত্রে (Particle accelerators)। সেখানে অতি-পারমাণবিক কণিকা যেমন ইলেকট্রন ও পজিট্রনের সংঘর্ষে উৎপন্ন গতিশক্তির প্রভাবে তৈরি হয় সম্পূর্ণ নতুন  কণিকা।
অবশ্য, এই ক্ষেত্রে এসব কণিকাদের সমন্বিত করে পরমাণু, অণু বা আমাদের পরিচিত বস্তুতে রূপদান সম্ভব নয়। কারণ হচ্ছে আসলে শক্তি থেকে নিরেট বস্তু বানানো সম্ভব নয়। এই প্রক্রিয়ায় শক্তি থেকে উৎপন্ন হয় কণা ও প্রতিকণা (Anti-matter)। প্রতিকণার ধর্ম হল কণার সাথে ক্রিয়া করে উভয়ে ধ্বংস হয়ে আবার শক্তিতে পরিণত হওয়া। অবশ্য, পদার্থবিদরা চৌম্বকক্ষেত্র কাজে লাগিয়ে কিছু পরিমান প্রতিকণাকে আটকাতে পেরেছেন। কিন্তু কাজটি অনেক কঠিন।
সূত্রঃ
১. উইকিপিডিয়া 
২. নাসা 

আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ

লেখকের পরিচয়

আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী। অনলাইনে লেখালেখির হাতেখড়ি হলেও বর্তমানে পাই জিরো টু ইনফিনিটি, ব্যাপন ও প্যাপাইরাসসহ বেশ কিছু ম্যাগাজিন ও পত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন। শখ ও ভবিষ্যত পেশাগত টার্গেট জ্যোতির্বিদ্যা ও কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি নিয়ে গবেষণা। বিশ্ব ডট কমের কন্ট্রিবিউটর, সম্পাদক ও প্রকাশক।