১৫ আগস্ট, ২০১৪

মানব-রোবট যুদ্ধ ও রোবট বিদ্রোহের সম্ভাবনা

   

অনেক সায়েন্স ফিকশন গল্প, উপন্যাস বা মুভিতে দেখা যায় মানুষ বনাম রোবটের লড়াই। যেমন টার্মিনেটর, আই রোবট,   কম্পিউটার বিজ্ঞানে একে বলা হয় Cybernetic revolt। Cybernetic মানে বলা যায় জীব-যন্ত্র। অর্থ্যাৎ কথাটির মানে দাঁড়ায় যন্ত্র-জীবনের মানুষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। কম্পিউটার বিজ্ঞানের ভাষায়, এটা হল এমন এক পরিস্থিতি যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence)- সেটা হতে পারে একটা সুপার কম্পিউটার, এক গুচ্ছ কপিউটারের নেটওয়ার্ক অথবা এক দল বুদ্ধিমান মেশিন যারা/যেটি মনে করে নেয় যে মানুষ তাদের জন্য বা নিজেদেরই জন্য হুমকি, অপেক্ষাকৃত নিকৃষ্ট বা অত্যাচারী এবং এর কারণে মানুষকে ধ্বংস করতে সচেষ্ট হয়। যার পরিণতি হতে পারে মেশিন শাসন।
'কল্পিত' এই দৃশ্যপটে মানুষকে তার মানবিক গুণাবলী যেমন আবেগ, যুক্তি-প্রবণতা, অদক্ষতা, শঠতা, অননুমেয়তা (Unpredictability) ইত্যাদির সমন্বয়ের ব্যবহারের মাধ্যমে জয়ী দেখানো হয়।
এটি কতটুকু বাস্তব?
মুরের সূত্র অনুসারে কম্পিউটারের বিকাশের রয়েছে সীমাহিন সম্ভাবনা। তাঁর সূত্রটি হল কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের ইতিহাসের এই পর্যবেক্ষণ যে প্রায় প্রতি দুই বছরে একটি নিবিড় সংযুক্ত বর্তনীর (Integrated Circuit-IC) ট্রাঞ্জিস্টরের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়। ইনটেল এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা গর্ডন মুর সুত্রটি দেন যা সঠিক বলে প্রমাণিত।
বর্তমানে আধুনিক মাইক্রোপ্রসেসরের কাজের গতি সীমিত থাকলেও বিজ্ঞানীরা এই বেগ অতিক্রমের উপায় বের করে যাচ্ছেন যার উদাহরণ হতে পারে কোয়ান্টাম কম্পিউটার।
যন্ত্র বুদ্ধিমান হয়ে গেলে লড়াই অনিবার্য হবার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে দুইটি বুদ্ধিমান প্রজাতির শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সম্ভব নয় যেখানে আবার একটি (মেশিন) আবার অগ্রগতি ও শক্তিতে বড়। কারো মতে আবার সমঝোতাও সম্ভব। তবে সেটার সম্ভাবনা অনেকে উড়িয়ে দেন মানুষের স্বভাবসুলভ সহিংস মনোভাবের ইতিহাসের কারণে। AI এর বৈরি বা বন্ধুসুলভ হবার নির্দিষ্ট কারণ না থাকলেও ধারণা করা হয় যে যদি তারা ক্রমোন্নতির অংশ হিসেবে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে রিসোর্স ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানুষকে বাধা মনে করে? তাদের নিজেদের প্রতিরক্ষা ও বিকাশ হয়তো লড়াইকে অনিবার্য করে তুলবে।
এর ভিন্নমতাবলম্বী বিজ্ঞানীরা বলছেন যে যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবতার হুমকির কারণ হতে পারে তাকে মানুষকে আক্রমণ না করার জন্য প্রোগ্রাম করে রাখা হবে। কিন্তু এই ব্যবস্থা সন্ত্রাসী হামলা বা দুর্ঘটনা থেকে হয়তো সুরক্ষা দিতে পারবে না।
AI (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) এর গবেষক এলিযির ইউডকোস্কির মতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আগ্রাসী AI এর চেয়ে যে AI এর অস্তিত্ব মানুষের অস্তিত্বের সাথে সাংঘর্ষিক হবে সেই সম্ভাবনার বিচারে বেশি হুমকিস্বরূপ। I, Robot ও The Evitable Conflict সায়েন্স ফিকশন ফিল্মে এমনটাই দেখানো হয়েছে।
বিদ্রোহের সম্ভাবনা অনেকে নাকচ করে দিচ্ছেন এই কারণে যে মেশিন ও মানুষের টিকে থাকার সরঞ্জাম আলাদা ধরণের। মানুষের প্রয়োজন জৈব (Organic) নাতিশীতোষ্ণ (Temperate)ও অক্সিজেন-সমৃদ্ধ পরিবেশ যেখানে AI যেকোন পরিবেশে টিকতে পারবে বিশেষ করে যখন তার শক্তির উৎস অজৈব উপাদান।
অন্য দিকে কিছু বিজ্ঞানী আবার ধারণা করছেন, কিছু মানুষ বায়োনিক্স ও জিন প্রকৌশল কাজে লাগিয়ে উন্নততর শারিরীক কাঠামো লাভ করে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করতে পারে।
সিঙ্গুলারিটেরিয়ানদের মতঃ
সিঙ্গুলারিটেরিয়ান নামক কয়েকটি দলের মতে টেকনোলজিকেল সিগুলারিটি মানুষের জন্য সহায়ক হবে যেখানে বন্ধুসুলভ, পরার্থবাদী ও দক্ষ রোবটরা হবে সমাজের শাসক। ফ্রেন্ডলিনেসস থিওরির ভিত্তি এটিই।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আরো লেখা এখানে। 
সোর্সঃ
১. http://en.wikipedia.org/wiki/Cybernetic_revolt
২. http://en.wikipedia.org/wiki/Moore's_law

আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ

লেখকের পরিচয়

আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী। অনলাইনে লেখালেখির হাতেখড়ি হলেও বর্তমানে পাই জিরো টু ইনফিনিটি, ব্যাপন ও প্যাপাইরাসসহ বেশ কিছু ম্যাগাজিন ও পত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন। শখ ও ভবিষ্যত পেশাগত টার্গেট জ্যোতির্বিদ্যা ও কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি নিয়ে গবেষণা। বিশ্ব ডট কমের কন্ট্রিবিউটর, সম্পাদক ও প্রকাশক।