৪ নভেম্বর, ২০১৪

পৃথিবীর আবর্তন বেগ কত?

   

পৃথিবী প্রতিনিয়ত পশ্চিম থেকে পূবে আবর্তন করে চলছে। এই আবর্তনের কারণেই ক্রমান্বয়ে রাত দিন হয়, সুর্যোদয় ও সূর্যাস্ত ঘটে। পশ্চিম থেকে পূবে এই আবর্তনের জন্যেই উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে দুটি মেরুর উদ্ভব ঘটেছে যা 'উত্তর দক্ষিণে মেরু থাকলেও পূবে পশ্চিমে মেরু নেই কেন' শীর্ষক পোস্টে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল।
পৃথিবীর আবর্তন বেগ কিন্তু সর্বত্র সমান নয়। বিষুব অঞ্চল তথা দুই মেরুর ঠিক মাঝখানে এই বেগ সর্বোচ্চ। অন্য দিকে,  বিষুব অঞ্চল থেকে মেরুর দিকে নিকটবর্তী হতে থাকলে বেগ কমতে থাকে। ঠিক মেরুবিন্দুতে বেগ শুন্য। এটা বোঝার জন্যে উল্লেখিত পোস্টে একটি উদাহরণ দিয়েছিলাম।এখন ভিন্ন একটি দিচ্ছি।
মনে করুন, আপনি একটি সুতার প্রান্তবিন্দুতে একটি বল বেঁধে সুতাসহ বলটিকে চারপাশে ঘোরাচ্ছেন। তাহলে দেখবেন, সুতার একেবারে প্রান্তবিন্দুতে বেগ সর্বোচ্চ। সুতার কোন বিন্দু আপনার হাতের যত নিকটে হবে তত বেগ হবে কম। ঐ ঘূর্ণন পথের কেন্দ্রবিন্দুতে বেগ হবে জিরো। কারণ সেটি ঘুরছেই না।
কল্পনায় পৃথিবীকে একবার পশ্চিম থেকে পূবে চক্কর দেওয়ান। অথবা একটি আপেল/ কমলা হাতে নিয়ে একইভাবে ঘোরান। দেখবেন প্রান্তবিন্দুর দিকে ক্রমান্বয়ে বেগ কম এবং একেবারে মেরুতে জিরো।
অবশ্য, এখানে আমরা রৈখিক বেগের কথা বলেছি। ঘূর্ণায়মান বস্তুর জন্যে আরেকটি বেগ হল কৌণিক বেগ। সেটি কিন্তু প্রতিটি বিন্দুতে একই হবে। কারণ, প্রতিটি বিন্দুই সমান সময়ে সমান পথ তথা ৩৬০ ডিগ্রি অতিক্রম করবে।

পৃথিবীর মেরু ও বিষুব অঞ্চল
এখন, আসুন তোতা পাখির মত আরেকজনের মুখে না শুনে নিজেরাই বের করে ফেলি পৃথিবীর আবর্তন বেগ কত।
আমরা জানি সমবেগের জন্য সূত্র হল S = vt।
এখানে, S = অতিক্রান্ত দূরত্ব,
           v= বেগ এবং
           t= সময়
তাহলে পাই, বেগের সূত্র,
সমবেগের সূত্র
বেগ বের করতে হলে আমাদের অতিক্রান্ত দূরত্ব (S) ও এই দূরত্ব পাড়ি দিতে অতিবাহিত সময় (t) জানতে হবে।
আমরা জানি, পৃথিবী প্রায় ২৪ ঘন্টায় একবার আবর্তন সম্পন্ন করে। আর বিষুব রেখা বরাবর এর পরিধি হল 40, 075 কি.মি। এই পথই আমরা (আসলে আমরা না, যারা বিষুব অঞ্চলে বাস করে) পৃথিবীর বুকে বসে পাড়ি দেই ২৪ ঘণ্টায়।
তাহলে, বিষুব অঞ্চলে আবর্তন বেগ = (40 075 ÷24) km/h। 
অর্থ্যাৎ ঘন্টায় প্রায় ১৬৭০ কি.মি। মাইলের হিসাবে এই বেগ হল ঘণ্টায় ১০৭০। এসআই এককে হিসেব করলে হবে প্রায় ৪৬৪ মি./সেকেন্ড। 

এই বেগ কিন্তু বিষুব অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য। বিষুব অঞ্চলের জন্য মেরু অঞ্চলের দিকে যেতে থাকলে পৃথিবীর আবর্তন অক্ষের দূরত্ব কাছে চলে আসবে। ফলে, ঐ বিন্দুর সাপেক্ষে পরিধি তথা ২৪ ঘণ্টায় অতিক্রান্ত পথ আরো কম হবে। [চিত্র দেখুন]
বিষুব অঞ্চল ছাড়া অন্য অঞ্চলে বেগ বের করার জন্য আমাদেরকে মূল বেগের সাথে ঐ স্থানের অক্ষাংশের cos এর মান গুণ করতে হবে। 
তাহলে, ৪৫ ডিগ্রি অক্ষাংশে পৃথিবীর আবর্তন বেগ হবে 
v = 1670 × cos 45 km/h = 1670 × 0.707 = 1180 km/h। 
আমাদের ঢাকায় পৃথিবীর আবর্তব বেগ কত হবে?
ঢাকার অক্ষাংশ হল 23.7 ডিগ্রি উত্তর। 
তাহলে, বেগ, v = 1670 ×  (cos 23.7) = 1529 km/h  মা প্রতি সেকেন্ডে ৪২৪ মিটার (প্রায়)। 
এত বিশাল বেগে ঘুরছি আমরা! তাহলে পৃথিবী থেকে পড়ে যাচ্ছি না কেন? জানতে চাইলে ক্লিক করে জেনে নিন!  

সূত্রঃ
১. উইকিপিডিয়াঃ Earth
২. নাসা

আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ

লেখকের পরিচয়

আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী। অনলাইনে লেখালেখির হাতেখড়ি হলেও বর্তমানে পাই জিরো টু ইনফিনিটি, ব্যাপন ও প্যাপাইরাসসহ বেশ কিছু ম্যাগাজিন ও পত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন। শখ ও ভবিষ্যত পেশাগত টার্গেট জ্যোতির্বিদ্যা ও কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি নিয়ে গবেষণা। বিশ্ব ডট কমের কন্ট্রিবিউটর, সম্পাদক ও প্রকাশক।